Sunday, September 4, 2016

বিস্মৃতি – সমর সেন


ভুলে যাওয়া গন্ধের মতো

কখনো তোমাকে মনে পড়ে।

হাওয়ার ঝলকে কখনো আসে কৃষ্ণচূড়ার উদ্ধত আভাস।

আর মেঘের কঠিন রেখায়

আকাশের দীর্ঘশ্বাস লাগে।

হলুদ রঙের চাঁদ রক্তে ম্লান হ’লো,

                                                                                  তাই আজ পৃথিবীতে স্তব্ধতা এলো,

                                                                                 বৃষ্টির আগে শব্দহীন গাছে যে-কোমল, সবুজ স্তব্ধতা আসে।

বনলতা সেন-জীবনানন্দ দাশ

জীবনানন্দ দাশ (ফেব্রুয়ারি ১৭, ১৮৯৯-অক্টোবর ২২, ১৯৫৪) 
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রেরপর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‌‌এতদিন কোথায় ছিলেন?
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর  রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
                                                                                                     সব পাখি ঘরে আসে-সব নদী-ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;
                                                                             থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।